বিশেষ প্রতিবেদক : ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে যাচ্ছেন। ওই দিন সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের ইনানী-পাটোয়ারটেক সৈকতে অনুষ্ঠেয় তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়ার উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত নৌশক্তি মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ ৩৬টির বেশি দেশ অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। ওই দিন বেলা আড়াইটায় সৈকতের লাবনী পয়েন্টের কাছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে এসে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দলীয় জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এবারের সফরকে ঘিরে পুরো শহর সাজানো হচ্ছে নানা আঙ্গিকে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ড-পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন সড়ক, উপসড়ক। ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কার, ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন, সড়কে লাইটিং ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলছে সমানতালে। প্রধান সড়কের অসম্পূর্ণ কাজও দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে শহরের কলাতলীর হাঙর ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত পাঁচ-ছয় কিলোমিটার সড়কে তোরণ নির্মাণের ধুম পড়েছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক তোরণ তৈরি হয়েছে। শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেতরে জনসভায় বিশাল মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে। জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিরাপদ করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গতকাল কক্সবাজার শহর ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কলাতলী সৈকত সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ব্যানার-বিলবোর্ড টাঙিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার জেলা পরিষদ, হোটেল মালিক, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
কউক চেয়ারম্যান কমোডর (অব) মো. নুরুল আবছার বলেন, কক্সবাজারের প্রতি শেখ হাসিনার আন্তরিকতা কতটুকু, তা টের পাওয়া যায় বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো খতিয়ে দেখলে। আগামী জুন মাসের মধ্যে কক্সবাজারে আসছে রেল।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। মহেশখালীতে হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর, তার পাশের মাতারবাড়ীতে সমাপ্তির পথে দেশের বৃহৎ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী অক্টোবর নাগাদ শেষ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণকাজ। টেকনাফ সাবরাং টু্৵রিজম পার্ক, সোনাদিয়ায় পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, খুরুশকুলে পাঁচ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্ল্যাটবাড়ির বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। কক্সবাজারের মানুষ না চাইতেই এত কিছু দিয়েছেন শেখ হাসিনা। কক্সবাজারের মানুষ মুখিয়ে আছেন শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে।
দলীয় প্রধানের এই সফরকে ঘিরে দলের নেতা-কর্মীরা আগের চেয়ে অনেক তৎপর জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায় থেকেও দলীয় প্রধানের জনসভায় লোকজনকে আসার সুযোগ করে দেওয়া হবে। সেন্ট মার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফ থেকেও লাখ লাখ মানুষ ছুটে আসতে চাইছেন। তবে সাগর চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এত লোকজনের জনসভায় আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করাও কঠিন। এত নৌযান জেলায় নেই।
৭ ডিসেম্বরের দলীয় জনসভা থেকেও প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের উন্নয়নে নতুন কিছু ঘোষণা দিতে পারেন জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার এবারের সফর গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে যা দিয়েছেন, অতীতে কোনো সরকারের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তখন অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক আশ্রয়ের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে ছুটে আসেন তিনি।
তখন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দলীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের উন্নয়নে যেসব প্রতিশ্রুতি (উন্নয়ন প্রকল্প) ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখন তার সব কটি দৃশ্যমান জানিয়ে ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারের এই মহা উন্নয়ন এবারের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ উপলক্ষে পাটোয়ারটেক সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে সাগরের জলরাশির ওপর দীর্ঘ একটি সেতু ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। সেতুর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার সালাম গ্রহণ এবং নৌশক্তি প্রদর্শন সম্মেলনের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। মহড়ায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ ৪১টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত ৩৬টি দেশ অংশগ্রহণের কথা নিশ্চিত করেছে।
পাঠকের মতামত: